পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফযিলত
রমযান মাসের ফযিলত ও তাৎপর্য অপরিসী। এ মাস বরকতময় মাস, আল্লাহকে খুশি করার ইবাদতের মাস ও নিজেকে পাপ থেকে ফিরাবার মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও রহমত সম্পর্কে হযরত মূসা (আঃ) মহান আল্লাহ পাকের কাছে আরজ জানালেন, হে আল্লাহ! রমযান বা সাওম মাসের ফযিলত কি? সৃষ্টিকর্তা বললেন, নিখিল জগতের উপর আমার যেমন শ্রেষ্ঠত্ব তেমনি রমযান মাসও অন্য মাসের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব। যে এ মাসে রোযা আদায় করবে, আমি তাকে সমস্ত জ্বীন ইনসান এবং যাবতীয় পশু পাখির সমতুল্য সওয়াব দান করব। একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) বললেন, হে মাবুদ আপনি আমাকে উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে শামিল করলেন না কেন? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- "বেহেসতের দরজা সমূহ এবং আকাশের দরজাসমূহ রমযানের শেষ রাত ছাড়া আর তা বন্ধ করা হয় না।" হযরত আবু হূরাইরা (রাঃ) হতে অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে- "পবিত্র রমযানের প্রথম রাত আগমন করলে মহান আল্লাহ পাক তার মাখলুকের দিকে নজর করেন। আর মহান আল্লাহ যার দিকে নজর করেন, তাকে কখনোই সাজা প্রদান করেন না।" অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহূ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন যে, মহান পালনকর্তা ঘোষণা করেছেন - "রোযা আমার জন্য এবং আমিই তার বদলা দান করব।"
শবে কদরের নামাজের নিয়মসমূহ
এ নামাজ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে পড়তে হয়। বিতর নামাজের পর হতে ছোবহে সাদিক পর্যন্ত এ নামাজের সময় থাকে। নামাজ, কোরআন তিলাওয়া,জিকির আজগার,দোযা দরূদ, আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া ইত্যাদি নফল ইবাদতে সারা রাত সজাগ থাকলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় এবং সকল গূনাহ মাফ হয়। দুই রাকাআত করে এ নামাজ পড়তে হয়।
শবে কদর নামাজের নিয়ত
"নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতি লাইলাতিল ক্বাদরি মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। "
এ নামাজ ইশার নামাজের পর তারাবীহ ও বিতর নামাজ করে পড়তে হয়।
১/ পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, শবে ক্বদরের রাতে যদি চার রাকাআত নামাজ পড়া যায়। এ নামাযের প্রতি রাকাআতে সূরা কদর ( ইন্না আনযালনা) একবার এবং সূরা ইখলাস সাতাশ বার পড়তে হয়। এ নামাজ পড়লে নামাজির সব গূনাহ মাফ হয়ে যাবে; সে যেন মায়ের পেঠ থেকে এই মাত্র পৃথিবীতে এসেছে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে বেহেশতে এক হাজার মহল দান করবেন।
২/ পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, এ রাতে দুই রাকাআত নামাজ পড়বে, প্রতি রাকাআতে সূরা কদর ( ইন্না আনযালনা) একবার এবং সূরা ইখলাস তিনবার পড়বে। এ নামাজ পড়লে মহান পাক রাব্বুল আলামিন তাকে শবে কদরের রাতের সব সাওযাব দান করবেন। তার রোযা কবুল করবেন এবং তাকে হযরত ইদ্রিস (আঃ), হযরত শোযাইব (আঃ), হযরত আযূব (আঃ) হযরত দাউদ (আঃ) এবং হযরত নূহ (আঃ) মত সাওয়াব দান করবেন এবং বেহেশতে তাকে মাশরিক হতে মাগরিব পর্যন্ত এক শহর দান করবেন।
৩/ পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, এ রাত্রিতে আরও চার রাকাআত নামাজ পড়া যায়। প্রতি রাকাআতে সূরা কদর ( ইন্না আনযালনা) তিন বার এবং সূরা ইখলাস পঞ্চাশ বার পড়বে। নামাজের পর সিজদায় যেয়ে এই দোয়াটি পড়বে- " সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। " অর্থ- " আল্লাহ তাযালা পুত পবিত্র এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য আল্লাহ তায়ালার ব্যতীত অপর কোন মাবূদ নাই। আর আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ।" এরপর যে দোয়া করবে, সেই দোয়া কবুল হবে ইনশাআল্লা। আল্লাহ তায়ালা তাকে অসীম নিয়ামত দান করবেন এবং সব গুনাহ মাফ করবেন।
৪/ এ রাতে দুই রাকাআত করে আরও বার রাকাআত নামাজ পড়া যায়। এ নামাজের প্রথম রাকাআতে সূরা কদর ( ইন্না আনযালনা) একবার এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা কাফিরূন একবার পড়তে হয়। এ নিয়মে বার রাকাআত নামাজ আদায় করবে।
রমযান মাসের ২৬ তারিখে সূর্যাস্ত যাবার সময় এই দোয়াটি ৪০ বার পাঠ করলে ৪০ বছরের সগীরাহ গুনাহ মাফ হবে। দোয়া- " সুবহানাল্লাহে ওযাল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। "
0 Comments